ত্রিপুরার ইতিহাস এবং ত্রিপুরায় মানুষের বসবাসের সূচনা

ত্রিপুরার ইতিহাস এবং ত্রিপুরায় মানুষের বসবাসের সূচনা

ভূমিকা

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হলো ত্রিপুরা। ভৌগোলিক দিক থেকে এটি পূর্বে মিয়ানমার, উত্তরে ও পূর্বে মিজোরাম, দক্ষিণে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পশ্চিমে বাংলাদেশের সমতল ভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত। ভৌগোলিক অবস্থান ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ত্রিপুরা সর্বদাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। প্রশ্ন হলো—ত্রিপুরায় মানুষের বসবাস কবে থেকে শুরু হয়েছিল এবং কিভাবে এই অঞ্চল ধাপে ধাপে একটি সুসংগঠিত রাজ্যে রূপান্তরিত হয়েছিল

প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষের বসতি

ত্রিপুরায় মানুষের বসতির সূচনা বহু প্রাচীনকালে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা অনুযায়ী—

নবপ্রস্তর যুগ (Neolithic Age): আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০০০–১৫০০ অব্দে এখানে প্রথম কৃষিনির্ভর সমাজ গড়ে উঠতে শুরু করে। পাহাড়ি এলাকা ও নদী অববাহিকায় পাথরের সরঞ্জাম, মৃৎশিল্প ও গৃহস্থালির সামগ্রী পাওয়া গেছে।

লোহাযুগ (Iron Age): খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে মানুষ লোহার অস্ত্র-সরঞ্জাম ব্যবহার শুরু করে। এতে কৃষি, শিকার ও যুদ্ধ—সবক্ষেত্রেই পরিবর্তন আসে।

এই সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে বহু উপজাতি পূর্ব ভারতের দিকে অভিবাসন করে। ত্রিপুরার স্থানীয় জনগোষ্ঠী মূলত তিব্বত-বর্মা ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।

প্রাচীন যুগের ত্রিপুরা

ত্রিপুরার প্রাচীন ইতিহাসের প্রধান উৎস “রাজমালা”। এটি ত্রিপুরার মাণিক্য রাজবংশের বংশানুক্রমিক ইতিহাস।

রাজমালা অনুযায়ী: ত্রিপুরার প্রথম রাজা ছিলেন “ত্রিপুরা”, যিনি পৌরাণিক কালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজ্য। যদিও ঐতিহাসিকভাবে এটি কল্পিত চরিত্র, তবু এতে প্রাচীন বসতির ইঙ্গিত রয়েছে।

ঐতিহাসিক তথ্য: আনুমানিক খ্রিস্টীয় প্রথম থেকে চতুর্থ শতাব্দীতে এখানে গোমতী নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে আর্য সংস্কৃতির প্রভাব পড়ে।

প্রমাণ: উনকোটি, দেবতামূর্তি, পাথরে খোদাই শিল্পকলা এবং প্রাচীন শিবমূর্তি ত্রিপুরার প্রাচীন ধর্মীয় সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে।

 

মধ্যযুগীয় যুগে ত্রিপুরা

ত্রিপুরার রাজনৈতিক শক্তির আসল বিকাশ হয় মধ্যযুগে।

1. মাণিক্য রাজবংশ (১৩শ শতাব্দী – ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ):

রাজা রত্ন ফা-র সময় (১৪শ শতাব্দী) থেকে রাজবংশ শক্তিশালী হয়।

রাজধানী ছিল উদয়পুর (গোমতী জেলার রাজারমহল) এবং পরবর্তী কালে আগরতলা।

মাণিক্যরা বাঙালি ও আর্য সংস্কৃতির প্রভাবে সমৃদ্ধ হয়।

 

2. সংস্কৃতি ও ধর্ম:

দুর্গাপূজা, বৈষ্ণবধর্ম, শাক্তধর্ম ও শৈবধর্মের প্রভাব পড়ে।

বাংলা ভাষা ও কাব্যচর্চা প্রসার লাভ করে।

 

3. জনগোষ্ঠীর গঠন:

ত্রিপুরার মূল উপজাতি যেমন ত্রিপুরা, রিয়াং, চাকমা, জুমিয়া ইত্যাদি বাস করলেও বাংলার সমতল থেকে ধীরে ধীরে বাংলাভাষী হিন্দু ও মুসলমান এসে বসবাস শুরু করে।

ফলে জনসংখ্যায় বৈচিত্র্য আসে।

 

 

ঔপনিবেশিক যুগে ত্রিপুরা

১৭৬৫ সালের পর: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দায়িত্ব নেয়। ত্রিপুরা তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত না হলেও করদ রাজ্য ছিল।

রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য (১৮৬২–১৮৯৬): আধুনিক ত্রিপুরার জনক। তিনি আগরতলায় রাজধানী স্থানান্তর করেন, শিক্ষা ও প্রশাসন সংস্কার করেন।

ব্রিটিশ প্রভাব: ইংরেজি শিক্ষা, আধুনিক প্রশাসন, রেলপথ ও ডাকব্যবস্থা চালু হয়।

জনসংখ্যা পরিবর্তন: ১৯শ শতাব্দীতে পূর্ববঙ্গ থেকে প্রচুর কৃষক ত্রিপুরায় আসেন এবং সমতল অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন।

 

আধুনিক যুগে ত্রিপুরা

1. ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন: ত্রিপুরার অনেক মানুষ জাতীয় আন্দোলনে যোগ দেন।

2. ১৯৪৭: ভারত বিভাজনের পর পূর্ববঙ্গ (পূর্ব পাকিস্তান, পরবর্তীতে বাংলাদেশ) থেকে ব্যাপক শরণার্থী প্রবেশ করে।

3. ১৯৪৯: ১৫ অক্টোবর ত্রিপুরা ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়।

4. ১৯৭২: ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে।

 

ত্রিপুরায় মানুষের বসতির ধাপভিত্তিক টাইমলাইন

খ্রিস্টপূর্ব ২০০০–১৫০০: নবপ্রস্তর যুগের বসতি (পাথরের সরঞ্জাম, কৃষির সূচনা)।

খ্রিস্টপূর্ব ১০০০–৫০০: লোহাযুগের বসতি, উপজাতীয় সমাজ গঠন।

খ্রিস্টীয় ১ম–৪র্থ শতাব্দী: আর্য ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রবেশ, গোমতী অববাহিকা সভ্যতা।

৭ম–১২শ শতাব্দী: বৌদ্ধধর্ম ও বৈষ্ণবধর্মের প্রভাব, উনকোটি শিল্পকলা।

১৩শ শতাব্দী: মাণিক্য রাজবংশের উত্থান।

১৪শ–১৮শ শতাব্দী: ত্রিপুরার সাম্রাজ্য শক্তিশালী, বাংলার সঙ্গে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন।

১৮শ–১৯শ শতাব্দী: ব্রিটিশ প্রভাব, আধুনিক শিক্ষা ও প্রশাসন।

১৯শ শতাব্দীর শেষ ভাগ: পূর্ববঙ্গ থেকে অভিবাসন, বাঙালি জনসংখ্যার বৃদ্ধি।

১৯৪৭: দেশভাগ ও ব্যাপক শরণার্থী আগমন।

১৯৪৯: ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।

১৯৭২: পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি।

খ্রিস্টীয় ১ম–৪র্থ শতাব্দীতে ত্রিপুরা: আর্য ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রবেশ এবং গোমতী অববাহিকা সভ্যতা

ভূমিকা

ত্রিপুরার ইতিহাস কেবল রাজবংশের পালাবদল বা রাজনৈতিক শক্তির উত্থান-পতনের কাহিনি নয়; এটি একই সঙ্গে বহুবিধ সংস্কৃতির মেলবন্ধনের এক অনন্য উদাহরণ। বিশেষ করে খ্রিস্টীয় ১ম থেকে ৪র্থ শতাব্দীর মধ্যে এই অঞ্চলে আর্য ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রবেশ ঘটে, যা স্থানীয় উপজাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে এক নতুন ধারার সভ্যতা গড়ে তোলে। গোমতী নদীর অববাহিকা সেই সময়ে ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

তৎকালীন ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পটভূমি

ত্রিপুরা ভৌগোলিকভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। পূর্বে মিয়ানমার, উত্তরে আসাম ও মিজোরাম, পশ্চিম ও দক্ষিণে বাংলাদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত এই অঞ্চল বরাবরই পূর্ব ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন রচনা করেছে। খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে এখানে সুসংগঠিত কোনো বড় রাজবংশ গড়ে ওঠেনি, তবে ছোট ছোট উপজাতীয় প্রধান বা কুলনেতাদের নেতৃত্বে সমাজ চালিত হতো।

আর্য সংস্কৃতির প্রবেশ

খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর দিকে আর্য সংস্কৃতির প্রভাব উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মাধ্যমে এই প্রভাব ত্রিপুরায় পৌঁছে যায়।

1. ভাষা ও সাহিত্য:

সংস্কৃত ভাষার প্রভাব দেখা যায়। পরবর্তী কালে রাজমালা ও অন্যান্য লিপিবদ্ধ দলিলের সূত্রে আমরা পাই, রাজপরিবারে সংস্কৃতকে ধর্মীয় ও প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল।

বৈদিক মন্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠান ধীরে ধীরে উপজাতীয় দেব-দেবীর পূজার সঙ্গে মিশে যায়।

 

2. ধর্মীয় প্রভাব:

শৈব ও শাক্ত ধর্মের সূচনা হয় এই সময়ে।

স্থানীয় পাহাড়ি দেবতাদের সঙ্গে শিব ও দুর্গার মিলিত রূপ দেখা যায়।

গোমতী নদীর তীরে শিবলিঙ্গ স্থাপন ও পূজার প্রথা শুরু হয়, যা আজও উদয়পুরের “ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির” প্রাঙ্গণে প্রতিফলিত।

 

3. সামাজিক পরিবর্তন:

আর্য প্রভাবিত সমাজে বর্ণভিত্তিক বিভাজনের কিছুটা প্রভাব পড়লেও তা উপজাতীয় সংস্কৃতির মধ্যে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

উপজাতি প্রধানেরা আর্য ব্রাহ্মণদের আমন্ত্রণ জানিয়ে যজ্ঞ ও পূজা আয়োজন শুরু করেন।

 

 

হিন্দু সংস্কৃতির বিস্তার

আর্য প্রভাবের পাশাপাশি হিন্দু পুরাণ ও কাব্যও এই সময়ে ত্রিপুরায় প্রবেশ করে।

পুরাণপ্রভাব:

স্কন্দপুরাণ, কালিকাপুরাণ ও মহাভারতের নানা কাহিনি এখানে প্রচলিত হয়।

লোকগাথা ও আঞ্চলিক কাহিনির সঙ্গে পুরাণকথা মিশে যায়।

মন্দির ও প্রত্ননিদর্শন:

যদিও বর্তমানের অনেক স্থাপনা পরবর্তী যুগের, তথাপি গবেষকরা মনে করেন যে খ্রিস্টীয় ৩য়–৪র্থ শতাব্দীতেই গোমতী অববাহিকায় পাথরের মূর্তি ও শিবলিঙ্গ নির্মাণ শুরু হয়েছিল।

পরবর্তীকালে উদয়পুর ও এর আশপাশের এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো তার সাক্ষ্য বহন করে।

সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ:

হিন্দু দেবদেবীর পূজা উপজাতীয় উৎসব যেমন গরিয়া পূজা, খার্চি পূজা ইত্যাদির সঙ্গে মিশে যায়।

স্থানীয় দেবতাদের হিন্দু দেবতার রূপ দেওয়া হয়—যেমন “ত্রিপুরেশ্বর” বা “ত্রিপুরাসুন্দরী”।

 

গোমতী অববাহিকা সভ্যতা

ত্রিপুরার ইতিহাসে গোমতী নদী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

1. অর্থনৈতিক কার্যক্রম:

গোমতী নদীর তীরে কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠে।

ধান চাষের প্রচলন হয় এবং মাছ ধরা ও বনজ সম্পদের ব্যবহার সমাজজীবনের প্রধান অংশে পরিণত হয়।

 

2. ধর্মীয় কেন্দ্র:

নদীর তীরকে পবিত্র বলে গণ্য করা হতো।

অনেক শিবলিঙ্গ ও মন্দির গোমতী নদীর তীরে স্থাপিত হয়েছিল।

যজ্ঞ ও পূজা-অর্চনার আসর বসত গোমতীর ঘাটে।

 

3. শিল্প ও সংস্কৃতি:

পাথরের খোদাই শিল্প, প্রাথমিক ভাস্কর্য ও মৃৎশিল্পের নিদর্শন পাওয়া গেছে।

উনকোটি অঞ্চলের ভাস্কর্যশিল্প, যদিও তা পরবর্তী শতাব্দীতে বিকশিত, এই সময়ের শিল্পধারার পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত।

 

 

রাজমালার উল্লেখ

ত্রিপুরার প্রাচীন ইতিহাসে “রাজমালা” গুরুত্বপূর্ণ উৎস। যদিও এটি মূলত পৌরাণিক ও আধা-ঐতিহাসিক বর্ণনা, তথাপি খ্রিস্টীয় ১ম–৪র্থ শতাব্দীর ঘটনাবলির কিছু পরোক্ষ উল্লেখ সেখানে পাওয়া যায়।

বলা হয়, এই সময়ে ত্রিপুরায় কয়েকজন পৌরাণিক চরিত্রের শাসন চলেছিল এবং তারা আর্য ব্রাহ্মণদের আমন্ত্রণ জানান পূজা ও যজ্ঞের জন্য।

গোমতী নদীকে রাজবংশীয় আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস হিসেবে মানা হতো।

 

বহিরাগত সংযোগ

ত্রিপুরার ভৌগোলিক অবস্থান তাকে পূর্ব ভারতের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছিল।

খ্রিস্টীয় ৩য়–৪র্থ শতাব্দীতে আরাকান (বর্তমান মিয়ানমার) ও কামরূপ (আসাম) থেকে মানুষ এসে বসতি স্থাপন করে।

এদের মধ্যে কেউ কেউ হিন্দুধর্ম গ্রহণ করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে একীভূত হয়।

এই সংযোগ ত্রিপুরাকে বহুসাংস্কৃতিক করে তোলে।

 

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন

এই সময়ের সামাজিক জীবন ছিল উপজাতীয় রীতিনীতি ও আর্য-হিন্দু প্রভাবের মিশ্রণ।

উৎসব: শিকার উৎসব, গরিয়া পূজা ও কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিল। এগুলিতে আর্য দেবতাদের মন্ত্র যুক্ত হতে থাকে।

খাদ্যাভ্যাস: ধান, বনজ শাকসবজি, পশুপালন ও নদীমাতৃক মাছ ছিল প্রধান খাদ্য।

বাসস্থান: বাঁশ ও কাঠের ঘর, মাটির হাঁড়ি, পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহৃত হতো।

নারী ভূমিকা: নারীরা কৃষিকাজ, মৃৎশিল্প ও গৃহস্থালির কাজে অংশ নিতেন। হিন্দু প্রভাবের ফলে কিছু ক্ষেত্রে নারী পূজার্চনার অংশীদার হন।

 

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

খ্রিস্টীয় ১ম–৪র্থ শতাব্দীর সময়কালকে ত্রিপুরার ইতিহাসে একটি রূপান্তরমূলক যুগ বলা যায়।

এটি ছিল উপজাতীয় সংস্কৃতি থেকে একটি বৃহত্তর আর্য-হিন্দু প্রভাবিত সমাজে রূপান্তরের সূচনা।

গোমতী নদীকে কেন্দ্র করে যে সভ্যতা গড়ে ওঠে, তা পরবর্তী মাণিক্য রাজবংশের ভিত্তি তৈরি করে।

ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ত্রিপুরা ভারতীয় সভ্যতার মূল ধারার সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করে।

 

উপসংহার

ত্রিপুরার প্রাচীন ইতিহাসের মধ্যে খ্রিস্টীয় ১ম–৪র্থ শতাব্দী এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ে আর্য ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রবেশ উপজাতীয় সমাজকে নতুন রূপ দেয়। গোমতী অববাহিকা হয়ে ওঠে ত্রিপুরার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যা পরবর্তী কয়েক শতাব্দীতে রাজনীতি ও সমাজজীবনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, লোককাহিনি ও “রাজমালা”র উল্লেখ প্রমাণ করে যে এই সময় থেকেই ত্রিপুরা ভারতীয় মূলধারার সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করেছিল।

Share this content:

ত্রিপুরার ইতিহাস এবং ত্রিপুরায় মানুষের বসবাসের সূচনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to top