Breaking
23 Oct 2025, Thu

ত্রিপুরায় জমি-নীতি: উপজাতি ৭০% জমির মালিক, বাঙালি বঞ্চিত

ত্রিপুরায় জমি-নীতি: উপজাতি ৭০% জমির মালিক, বাঙালি বঞ্চিত?

শিরোনাম:

উপজাতিদের জমি-নীতি ও বাস্তব চিত্র: বৈষম্যের অভিযোগে কার লাভ, কার ক্ষতি?

 

ভূমিকা:

ত্রিপুরা রাজ্যে উপজাতি ও বাঙালি জনসংখ্যার মধ্যে জমির মালিকানা, অধিকার ও রাজনৈতিক দাবিদাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে। সাম্প্রতিক আলোচনায় অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—যখন উপজাতি এলাকায় জমির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে, তখনও কেন আরও সুযোগ-সুবিধার দাবি করা হচ্ছে? কেন এমন আইন, যেখানে বাঙালিরা উপজাতিদের কাছ থেকে জমি কিনতে পারে না, কিন্তু উপজাতিরা বাঙালিদের কাছ থেকে জমি কিনতে পারে?

 

জমির পরিসংখ্যান ও বাস্তবতা

 

ত্রিপুরায় বর্তমানে ADC (Autonomous District Council) অঞ্চলের আওতায় প্রায় ৭০% থেকে ৭২% জমি রয়েছে, যা উপজাতি এলাকাভুক্ত। অথচ রাজ্যের মোট উপজাতি জনসংখ্যা প্রায় ৩০%, আর বাঙালি জনসংখ্যা ৭০%। অর্থাৎ ৩০% জনগোষ্ঠী রাজ্যের প্রায় ৭০% জমির উপর মালিকানা ও প্রশাসনিক অধিকার রাখছে।

অন্যদিকে, ৭০% জনগোষ্ঠী (মূলত বাঙালিরা) কেবলমাত্র ৩০% জমিতে বসবাস করছে। এই অসম ভারসাম্য থেকেই সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—“এত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন আরও সুযোগ দাবি করা হচ্ছে?”

 

জমি কেনা-বেচার বৈষম্য

 

বর্তমান বিধি অনুযায়ী, উপজাতিরা বাঙালিদের কাছ থেকে জমি কিনতে পারেন, কিন্তু বাঙালিরা উপজাতিদের কাছ থেকে জমি কিনতে পারেন না।

এই আইনি ব্যবস্থাটি মূলত উপজাতি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও ভূমি সুরক্ষার উদ্দেশ্যে করা হলেও, আজকের প্রেক্ষাপটে এটি অনেকের কাছে বৈষম্যমূলক মনে হচ্ছে। কারণ—

 

একদিকে “সমান নাগরিক অধিকার”-এর দাবি করা হচ্ছে,

 

অন্যদিকে জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে দ্বৈত নীতি বজায় রাখা হয়

 

চাকরি ও সাংবিধানিক সুবিধা

 

ত্রিপুরার উপজাতি জনগোষ্ঠী ভারতের সংবিধানে সংরক্ষিত শ্রেণি (Scheduled Tribe) হিসেবে স্বীকৃত। ফলে তারা শিক্ষা, চাকরি, রাজনীতি ও প্রশাসনে সংরক্ষণের সুবিধা পান।

এই সংবিধানিক সুবিধাগুলো বাস্তবেও উপজাতিদের জন্য নানা সুযোগের দরজা খুলেছে—

Also Read  Google Ads Advertiser Verification Form পূরণের সম্পূর্ণ গাইড: ধাপে ধাপে নির্দেশনা

 

সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ,

 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা,

 

রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব (TTAADC সহ)।

 

 

তবুও অনেকের দাবি—“আমরা বঞ্চিত।” অথচ বাস্তব চিত্রে দেখা যায়, সংরক্ষণ এবং জমি-নীতি মিলিয়ে উপজাতিরা ইতিমধ্যেই বহু বিশেষ সুযোগ পাচ্ছেন।

 

রাজনৈতিক প্রভাব ও বিভাজনের রাজনীতি

 

বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে বিভাজন তৈরি করা।

কিছু নেতা বা প্রভাবশালী মহল ইচ্ছাকৃতভাবে উপজাতি-বাঙালি বিভাজনকে উস্কে দিচ্ছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য একটাই—

 

জনগণের আবেগ ব্যবহার করে রাজনৈতিক লাভ নেওয়া।

 

সাধারণ মানুষকে রাস্তায় বসিয়ে রেখে নিজেরা “এসি রুমে” ও বিলাসবহুল জীবনে থাকা।

 

 

এমন অবস্থায় উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষকেই প্রশ্ন করতে হবে—

“আমরা কার জন্য আন্দোলন করছি?”

“আমাদের দাবিতে সত্যিই কার উপকার হচ্ছে?”

 

 

আত্মসমালোচনা ও ভবিষ্যতের পথ

 

এখন সময় এসেছে রাজনৈতিক নেতাদের কথায় নয়, বরং বাস্তব চিত্র দেখে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার।

 

উপজাতিদের উচিত—বাহ্যিক প্ররোচনায় না পড়ে শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া।

 

বাঙালিদের উচিত—সহযোগিতা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে রাজ্যের ঐক্য বজায় রাখা।

কারণ, সংঘাতের রাজনীতি কখনও কারও মঙ্গল বয়ে আনে না।

 

✅ উপসংহার:

 

ত্রিপুরা যেমন উপজাতি সংস্কৃতির গর্ব, তেমনি বাঙালি ঐতিহ্যেরও প্রতিচ্ছবি।

এই দুই সম্প্রদায়ের পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহানুভূতি ও সংলাপই পারে প্রকৃত উন্নয়নের পথ খুলতে।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *