ত্রিপুরায় জমি-নীতি: উপজাতি ৭০% জমির মালিক, বাঙালি বঞ্চিত?
শিরোনাম:
উপজাতিদের জমি-নীতি ও বাস্তব চিত্র: বৈষম্যের অভিযোগে কার লাভ, কার ক্ষতি?
ভূমিকা:
ত্রিপুরা রাজ্যে উপজাতি ও বাঙালি জনসংখ্যার মধ্যে জমির মালিকানা, অধিকার ও রাজনৈতিক দাবিদাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে। সাম্প্রতিক আলোচনায় অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—যখন উপজাতি এলাকায় জমির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে, তখনও কেন আরও সুযোগ-সুবিধার দাবি করা হচ্ছে? কেন এমন আইন, যেখানে বাঙালিরা উপজাতিদের কাছ থেকে জমি কিনতে পারে না, কিন্তু উপজাতিরা বাঙালিদের কাছ থেকে জমি কিনতে পারে?
জমির পরিসংখ্যান ও বাস্তবতা
ত্রিপুরায় বর্তমানে ADC (Autonomous District Council) অঞ্চলের আওতায় প্রায় ৭০% থেকে ৭২% জমি রয়েছে, যা উপজাতি এলাকাভুক্ত। অথচ রাজ্যের মোট উপজাতি জনসংখ্যা প্রায় ৩০%, আর বাঙালি জনসংখ্যা ৭০%। অর্থাৎ ৩০% জনগোষ্ঠী রাজ্যের প্রায় ৭০% জমির উপর মালিকানা ও প্রশাসনিক অধিকার রাখছে।
অন্যদিকে, ৭০% জনগোষ্ঠী (মূলত বাঙালিরা) কেবলমাত্র ৩০% জমিতে বসবাস করছে। এই অসম ভারসাম্য থেকেই সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—“এত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন আরও সুযোগ দাবি করা হচ্ছে?”
জমি কেনা-বেচার বৈষম্য
বর্তমান বিধি অনুযায়ী, উপজাতিরা বাঙালিদের কাছ থেকে জমি কিনতে পারেন, কিন্তু বাঙালিরা উপজাতিদের কাছ থেকে জমি কিনতে পারেন না।
এই আইনি ব্যবস্থাটি মূলত উপজাতি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও ভূমি সুরক্ষার উদ্দেশ্যে করা হলেও, আজকের প্রেক্ষাপটে এটি অনেকের কাছে বৈষম্যমূলক মনে হচ্ছে। কারণ—
একদিকে “সমান নাগরিক অধিকার”-এর দাবি করা হচ্ছে,
অন্যদিকে জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে দ্বৈত নীতি বজায় রাখা হয়
চাকরি ও সাংবিধানিক সুবিধা
ত্রিপুরার উপজাতি জনগোষ্ঠী ভারতের সংবিধানে সংরক্ষিত শ্রেণি (Scheduled Tribe) হিসেবে স্বীকৃত। ফলে তারা শিক্ষা, চাকরি, রাজনীতি ও প্রশাসনে সংরক্ষণের সুবিধা পান।
এই সংবিধানিক সুবিধাগুলো বাস্তবেও উপজাতিদের জন্য নানা সুযোগের দরজা খুলেছে—
সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ,
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা,
রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব (TTAADC সহ)।
তবুও অনেকের দাবি—“আমরা বঞ্চিত।” অথচ বাস্তব চিত্রে দেখা যায়, সংরক্ষণ এবং জমি-নীতি মিলিয়ে উপজাতিরা ইতিমধ্যেই বহু বিশেষ সুযোগ পাচ্ছেন।
রাজনৈতিক প্রভাব ও বিভাজনের রাজনীতি
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে বিভাজন তৈরি করা।
কিছু নেতা বা প্রভাবশালী মহল ইচ্ছাকৃতভাবে উপজাতি-বাঙালি বিভাজনকে উস্কে দিচ্ছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য একটাই—
জনগণের আবেগ ব্যবহার করে রাজনৈতিক লাভ নেওয়া।
সাধারণ মানুষকে রাস্তায় বসিয়ে রেখে নিজেরা “এসি রুমে” ও বিলাসবহুল জীবনে থাকা।
এমন অবস্থায় উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষকেই প্রশ্ন করতে হবে—
“আমরা কার জন্য আন্দোলন করছি?”
“আমাদের দাবিতে সত্যিই কার উপকার হচ্ছে?”
আত্মসমালোচনা ও ভবিষ্যতের পথ
এখন সময় এসেছে রাজনৈতিক নেতাদের কথায় নয়, বরং বাস্তব চিত্র দেখে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার।
উপজাতিদের উচিত—বাহ্যিক প্ররোচনায় না পড়ে শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া।
বাঙালিদের উচিত—সহযোগিতা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে রাজ্যের ঐক্য বজায় রাখা।
কারণ, সংঘাতের রাজনীতি কখনও কারও মঙ্গল বয়ে আনে না।
✅ উপসংহার:
ত্রিপুরা যেমন উপজাতি সংস্কৃতির গর্ব, তেমনি বাঙালি ঐতিহ্যেরও প্রতিচ্ছবি।
এই দুই সম্প্রদায়ের পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহানুভূতি ও সংলাপই পারে প্রকৃত উন্নয়নের পথ খুলতে।
Share this content: