ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর উপায়
1. ট্রাইগ্লিসারাইড কী?
2. উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের লক্ষণ
3. ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়ার কারণ
4. উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের ঝুঁকি উপাদানগুলো কী?
5. সাধারণ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কত হওয়া উচিত?
6. ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর উপায
7. উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের চিকিৎসা
ট্রাইগ্লিসারাইড কী?
ট্রাইগ্লিসারাইড (Triglycerides) হলো এক ধরনের চর্বি, যা রক্তে প্রবাহিত হয়। ট্রাইগ্লিসারাইড আমাদের শরীরে দুইভাবে আসে— প্রথমত, শরীর নিজেই ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি করে এবং দ্বিতীয়ত, এটি খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। সুস্থ থাকার জন্য শরীরে কিছু ট্রাইগ্লিসারাইড থাকা জরুরি। তবে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি হলে হৃদরোগ ও স্ট্রোক হতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গ্রহণ করে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের লক্ষণ
সাধারণত রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি হলেও কোনো সুস্পষ্ট উপসর্গ দেখা যায় না। কিন্তু চিকিৎসা না করানো বা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড করোনারি হার্ট ডিজিজ (Coronary heart disease) ও স্ট্রোকের মতো জটিল সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। অত্যধিক ট্রাইগ্লিসারাইড অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস (Acute pancreatitis) বা অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহের কারণ হতে পারে, যা তীব্র পেটব্যথা সৃষ্টি করে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যেতে পারে—
পেটের উপরের অংশে ব্যথা: রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে গেলে অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ হয়, যার ফলে পেটের উপরের দিকে ব্যথা হয়। এর সাথে জ্বর, বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে।
হাত-পায়ে ছোট হলুদ দাগ: ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে গেলে জ্যান্থোমাস নামে পরিচিত অবস্থা হয়, যেখানে ত্বকের নিচে চর্বি জমে যায় এবং রক্তের রঙেও পরিবর্তন দেখা দেয়।
ধমনিতে ব্লকেজ: ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে গেলে রক্ত ঘন হয়ে যায়, ধমনিগুলো শক্ত হয়, এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। এর ফলে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়, যা স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক-এর ঝুঁকি বাড়ায়।
উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড কোনো সাধারণ সমস্যা নয়; এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই দ্রুত একজন ভালো কার্ডিওলজিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়ার কারণ
ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধির পেছনে অনেক কারণ রয়েছে—
ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা শরীরে চর্বির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের কারণ হতে পারে।
মেটাবলিক সিনড্রোম: এই অবস্থা অনেক সময় অজানাতেই থেকে যায়, কিন্তু এটি ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে ট্রাইগ্লিসারাইডও বেড়ে যায়।
হাইপোথাইরয়েডিজম: থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
কিডনির রোগ: কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীর থেকে বর্জ্য বের হতে পারে না, ফলে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যায়।
গর্ভাবস্থা: গর্ভধারণের সময় শরীরে নানা পরিবর্তন হয়, যা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা প্রভাবিত করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
জেনেটিক কারণ: পরিবারের কারও উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি থাকে।
খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, মদ্যপান ও ক্যালোরি গ্রহণ ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়।
ওষুধ: কিছু ওষুধ যেমন— ডিউরেটিকস, স্টেরয়েড, বিটা ব্লকার, হরমোনজনিত ও ইমিউনোসপ্রেশন ওষুধ— ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়াতে পারে।
উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের লক্ষণ
সাধারণত উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে নিয়ন্ত্রণে না থাকলে করোনারি হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক ও অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস (অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ) হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে—
পেটের উপরের দিকে ব্যথা: ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়লে অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ হয়, ফলে পেটের উপরের দিকে ব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে।
হাত-পায়ে ছোট হলুদ দাগ: ত্বকের নিচে চর্বি জমে জ্যান্থোমাস তৈরি হয়।
ধমনিতে ব্লকেজ: রক্ত ঘন হয়ে যায়, ধমনিগুলো শক্ত হয় ও কোলেস্টেরল বাড়ে, ফলে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয় এবং স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
—
ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ার কারণ
ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা
মেটাবলিক সিনড্রোম
ডায়াবেটিস
হাইপোথাইরয়েডিজম
কিডনির রোগ
গর্ভাবস্থা
পারিবারিক ইতিহাস
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (অতিরিক্ত চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, মদ্যপান)
কিছু ওষুধ (ডিউরেটিকস, স্টেরয়েড, বিটা ব্লকার, ইমিউনোসপ্রেশন ইত্যাদি)
—
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের উপায়
1. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন – সঠিক ওজন বজায় রাখুন ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
2. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন – শাকসবজি, ফল, ডাল ও আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান।
3. চিনি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট কমান – মিষ্টি, সফট ড্রিংক, সাদা আটা ও প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলুন।
4. স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলুন – লাল মাংস, ভাজাপোড়া খাবার ও প্যাকেটজাত স্ন্যাক্স কম খান।
5. মদ্যপান সীমিত করুন – অ্যালকোহল ট্রাইগ্লিসারাইড দ্রুত বাড়ায়।
6. ধূমপান ত্যাগ করুন – এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
7. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন – বছরে অন্তত একবার রক্তে লিপিড প্রোফাইল চেক করুন।
8. ডায়াবেটিস ও থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখুন – প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করুন।
Article Credit by
Written and Verified by:
Share this content: